স্বদেশ ডেস্ক:
‘কে ওই শোনালো মোরে আজানের ধ্বনি/ মর্মে মর্মে সেই সুর, বাজিল কী সুমধুর, আকুল হইলো প্রাণ নাচিলো ধ্বমনী/ কি মধুর আজানের ধ্বনি’। আমেরিকা সৃষ্টির পর থেকেই হয়তো এখানে আযানের সুর এমন আবেদন পায়নি। দূর মিনার থেকে ভেসে আসা এই শ্বাশ্বত আহ্বান হয়তো শুনেনি কেউ কবিতার মতো করে। তাইতো এখানকার মুসলমানদের অন্তর তৃষিত ছিলো আযানের ধ্বনি শোনার জন্য।
এবার সেই তৃষ্ণা অনেকটাই পূরণ করছে নিউইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষ। এখন থেকে প্রতি শুক্রবার ও পবিত্র রমজানে মাগরিবের নামাজের আযান মাইকে ধ্বনিত হবে মসজিদগুলো থেকে। নগর পিতা এরিক এডামসের সাম্প্রতিক এ ঘোষণায় কেবল আমেরিকা নয় পুরো মুসলিম দুনিয়ায় আনন্দের বন্যা বইছে। যদিও প্রথম দিকে খবর ছিলো দিনে তিন বেলা (যোহর, আসর ও মাগরিব) আযান দিতে পারবে মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার ওই ঘোষণার পর ফের সিদ্ধান্তে কিছুটা পরিবর্তন আনে নগর কর্তৃপক্ষ। মেয়র এরিক এডামস সংবাদ সম্মেলনে পরিবর্তিত এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
এ উপলক্ষ্যে মেয়র মঙ্গলবার যখন সংবাদ সম্মেলনের ঘোষণা দেন তখন সবাই ধরেই নিয়েছিলেন আযানের এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি হয়তো আনুষ্ঠানিকভাবেই ঘোষণা করবেন তিনি। কিন্তু মেয়র ঘোষণা দিলেন তিন বেলা নয় সপ্তাহে একদিন শুক্রবার এবং রমজানে মাগরিবের ওয়াক্তেই কেবল মাইকে আযান দিতে পারবেন মসজিদ কর্তৃপক্ষ।
ওই দিন নিউইয়র্ক সিটির মেয়র এরিক অ্যাডামস সালাম দিয়ে তার বক্তব্য শুরু করেন। এই সময় অডিটোরিয়ামে ব্যাপক সংখ্যক মুসলিম প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। মেয়র বলেন, নিউইয়র্ক সিটি হচ্ছে সকল ধর্ম এবং বর্ণের মানুষের সিটি। এই সিটির প্রত্যেকের ধর্মীয় স্বাধীনতা রয়েছে। সেই স্বাধীনতা আমি নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, স্কুলে আমরা হালাল খাদ্য সরবরাহ করছি। আমরা সকল ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে চাই।
মেয়র বলেন, নিউইয়র্ক সিটির মুসলিম সম্প্রদায় সপ্তাহে শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেন। সেই জুমার নামাজের আজান মাইকে প্রচারের জন্য আর অনুমতির প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ জুমার নামাজের আজান মাইকে দেয়া যাবে। সেই সাথে পবিত্র রমজানের সময় মাগরিবের নামাজের আজানের জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই। রমজানে মাগরিবের নামাজের সময় মাইকে আজান দেয়া যাবে। তবে নিউইয়র্ক রাজ্যের সাউন্ড ল’ অনুযায়ী মাইক ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সবার মনে রাখতে হবে যাতে করে আপনার কোন ব্যবহারে বা কাজে আপনার পাশের কমিউনিটির মানুষ বিরক্ত না হয়।
তিনি বলেন, আমি গর্বিত এই জন্য যে তারা আজানের স্বাধীনতা পেয়েছেন। আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ সকল ধর্মের মানুষের স্বাধীনতা দিতে। এটা প্রথমবারের জন্য মুসলিম কমিউনিটিকে দেয়া হলো। আমি মনে করি এটা নতুন ইতিহাস।
তিনি আরো বলেন, অতীতের মত আমার পক্ষ থেকে আমার অফিস থেকে মুসলিম কমিউনিটির জন্য সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজানের ব্যাপারে বলেন, এর জন্য প্রয়োজন পাশের কমিউনিটির সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা। সম্পর্ক ভাল করতে পারলে, অন্যরা অসুবিধা বোধ না করলে আগামীতে এই বিষয় নিয়ে চিন্তা করা যাবে। তিনি সালাম দিয়ে তার বক্তব্য শেষ করেন। এই সময় নিউইয়র্ক সিটির পুলিশ কমিশনার এবং মুসলিম এ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।